জানা গেল আকাশমনি গাছের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে

- আপডেট সময় : ১১:৩৮:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫ ১৬২ বার পড়া হয়েছে
আমাদের দেশে অনেকেই আকাশমনি গাছ লাগিয়ে থাকেন, কারণ এটি দ্রুত বড় হয় এবং কাঠও ভালো পাওয়া যায়।কিন্তু খুব কম মানুষ জানেন যে, আকাশমনি গাছের ক্ষতিকর দিক আমাদের পরিবেশ ও কৃষির জন্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে। এই লেখায় আমরা সহজ ভাষায় ও উদাহরণ দিয়ে জানবো, কেন আকাশমনি গাছ নিয়ে এখনই সচেতন হওয়া দরকার।
আকাশমনি গাছ কী এবং এর বৈশিষ্ট্য
আকাশমনি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Acacia auriculiformis। এটি একটি বহিরাগত (বাহির থেকে আনা) দ্রুতবর্ধনশীল গাছ। এই গাছ কম সময়ে অনেক উঁচু হয় এবং কাঠ সংগ্রহের জন্য অনেকেই এটি বেছে নেন। এটি প্রচুর পানি শোষণ করে ও অন্যান্য গাছের মতো সঙ্গী হতে পারে না। তাই এটি খুব দ্রুত চারপাশ দখল করে নেয়।
আকাশমনি গাছের ক্ষতিকর দিকসমূহ
আকাশমনি গাছের ক্ষতিকর দিক সবচেয়ে বেশি দেখা যায় জমির উর্বরতা হ্রাসে। এই গাছ এমন এক ধরনের রাসায়নিক নির্গত করে যা মাটির গুণ নষ্ট করে দেয়। ফলে আশেপাশে থাকা ফসল বা অন্য গাছ বেড়ে উঠতে পারে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অনেক কৃষক জানিয়েছেন তাদের জমিতে আকাশমনি গাছ লাগানোর পর ফসল ভালো হচ্ছে না।তাদের অভিযোগ মাটি শক্ত হয়ে গেছে, আগের মতো ফলন হচ্ছে না। এই গাছের পাতা দ্রুত পড়ে গিয়ে মাটিতে এক ধরনের আস্তরণ তৈরি করে। যার ফলে আলো ও পানি নিচে যেতে পারে না। ফলে অন্যান্য ছোট গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার এই গাছ অতিরিক্ত পানি টেনে নেয় বলে মাটির নিচের পানির স্তর কমে যায়। যেটা দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
কৃষি ও পরিবেশের জন্য আকাশমনি গাছ কতটা বিপজ্জনক?
কৃষকদের জন্য এটি খুবই বিপদজনক। তারা দীর্ঘমেয়াদে দেখেছেন। এই গাছ লাগানোর পর জমির গুণ নষ্ট হয়ে গেছে। মাটিতে মিশে যাওয়া পাতার রাসায়নিক প্রভাব ফসলের বৃদ্ধিতে বাঁধা দেয়। পরিবেশগত দিক থেকেও এটি জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে। পাখি, কীটপতঙ্গ ও অন্য প্রজাতির গাছপালা টিকতে পারে না। ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়।
জমির উর্বরতা নষ্ট করে আকাশমনি গাছ
এই গাছের মূল সমস্যা হলো, এটি মাটির উর্বরতা কেড়ে নেয়। এর শেকড় মাটির গভীর থেকে পুষ্টি শোষণ করে নেয়, যা অন্য গাছের জন্য রেখে দেয় না। ফলে ধীরে ধীরে জমি শুকিয়ে যায়। এমনকি সার ব্যবহার করলেও ফলাফল পাওয়া যায় না।
আকাশমনি গাছ বনাম দেশি গাছ
আমাদের দেশে আগে যেসব দেশি গাছ ছিল, যেমন: আম, কাঁঠাল, হরিতকী, অর্জুন সেগুলোর শেকড়, ছায়া ও ফল সবই পরিবেশবান্ধব। আকাশমনি সেই তুলনায় ছায়া দেয় কম, ফল দেয় না, আর মাটি নষ্ট করে। তাই দেশি গাছগুলো পরিবেশ রক্ষায় অনেক বেশি কার্যকর।
বিকল্প গাছের পরামর্শ ও টেকসই সমাধান
আকাশমনি গাছের বদলে নিম, কড়ই, মেহগনি, হরিতকী বা আমলকী গাছ লাগানো নিরাপদ। এসব গাছ মাটির গুণ বাড়ায়, ছায়া দেয়, ফল দেয় এবং প্রাণীকুলের জন্য উপযোগী। উদাহরণ: অনেক বিদ্যালয় ও পারিবারিক বাগানে এখন আকাশমনি কেটে দেশি গাছ লাগানো হচ্ছে। তাতে পাখি আসছে, বাতাস ঠান্ডা হচ্ছে এবং ফলও পাওয়া যাচ্ছে।
আকাশমনি গাছের অপকারিতা সচেতন না হলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার
আকাশমনি গাছের অপকারিতা নিয়ে এখন গবেষণাও শুরু হয়েছে। বিভিন্ন কৃষি প্রতিষ্ঠান বলছে, এই গাছের কারণে কৃষি জমির হার দিন দিন বাড়ছে। আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, তাহলে ভবিষ্যতে খাদ্য উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছ থেকে দূরে থাকুন
আকাশমনি গাছের ক্ষতিকর দিক শুধু মাটি নয়, পুরো পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই প্রয়োজন সচেতনতা ও পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগানো। দেশি ও পরিবেশবান্ধব গাছ রোপণ করে আমরা একটি সবুজ ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়তে পারি।