আসসালামুয়ালাইকুম বোনেরা, প্রতি মাসে নিয়ম করে মাসিক হওয়া একজন নারীর স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, কারো মাসিক ২৮ বা ৩০ দিনের বদলে ২০ দিন পর পর শুরু হচ্ছে। এটা অনেক মেয়ের মধ্যেই আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই জানতে চান, ২০ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি? এই সমস্যার পেছনে বেশ কিছু স্বাস্থ্যগত ও হরমোনজনিত কারণ থাকতে পারে। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
২০ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ বিস্তারিত
প্রথমেই জেনে রাখা দরকার, মাসিক চক্র সাধারণত ২৮-৩৫ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। কিন্তু যদি মাসিক প্রতি ২০ দিনে একবার হয়, সেটিকে ‘অনিয়মিত মাসিক’ ধরা হয়। এই অবস্থার পেছনে যেসব কারণ থাকতে পারে।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের সমতা বিঘ্নিত হলে পিরিয়ড চক্র ছোট হয়ে যায়। এমনকি ২০ দিন পর পরও মাসিক হতে পারে। বিশেষ করে টিনএজার বা মেনোপজের কাছাকাছি সময়ে এমন সমস্যা বেশি দেখা যায়।
ওভারিয়ান সিস্ট বা PCOS
যাদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) আছে, তাদের পিরিয়ড অনিয়মিত হয়। অনেক সময় মাসিক ২০ দিন পরপর বা কখনো এক মাস বাদেও হতে পারে। এই সমস্যা হলে প্রজনন ক্ষমতার ওপরও প্রভাব পড়ে।
থাইরয়েড সমস্যা
থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের মেটাবলিজম ও হরমোন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি হাইপার বা হাইপো থাইরয়েডিজম থাকে, তাহলে মাসিক চক্র অনিয়মিত হতে পারে।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ
যারা দীর্ঘদিন মানসিক চাপ বা উদ্বেগে ভুগছেন, তাদের শরীরে কর্টিসল হরমোন বেড়ে যায়। ফলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং মাসিক দ্রুত আসতে পারে।
ওজন পরিবর্তন
হঠাৎ বেশি ওজন বেড়ে যাওয়া বা খুব কমে যাওয়া হরমোনে প্রভাব ফেলে। ফলে পিরিয়ড চক্রে পরিবর্তন দেখা যায়।
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি
অনেকে গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার পর মাসিক চক্র কমে যেতে পারে। বিশেষ করে ওসিএস পিল শুরু বা বন্ধ করার সময় এ ধরনের সমস্যা হয়।
অনিয়মিত মাসিকের লক্ষণ কী কী?
অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তাদের মাসিক অনিয়মিত হচ্ছে। কিন্তু কিছু লক্ষণ দেখলে বুঝা যায়:
• মাসিকের সময় ব্যথা অনেক বেশি হওয়া।
• অতিরিক্ত রক্তপাত বা কম রক্তপাত।
• মাসিকের সময়ে আগে-পরে ভীষণ ক্লান্তি বা মাথা ঘোরা।
• মাঝে মাঝে পিরিয়ডে রক্তে জমাট বাঁধা।
এমন কিছু হলে অবশ্যই গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২০ দিন পর পর মাসিক হওয়া কি গর্ভধারণে প্রভাব ফেলে?
হ্যাঁ, দীর্ঘদিন ২০ দিনের ব্যবধানে মাসিক হলে গর্ভধারণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ এতে ডিম্বাণু নির্গমন বা ওভুলেশন ঠিকমতো না হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যারা সন্তান নিতে চান, তাদের জন্য এটি চিন্তার বিষয় হতে পারে।
গাইনোকোলজিস্ট পরামর্শ কবে দরকার?
যদি ৩ মাসের বেশি সময় ধরে মাসিক ২০ দিন পরপর হয়, পেটের নিচে তীব্র ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তপাত, মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা, কিংবা মাসিকের সময় রক্তের রঙ অনিয়মিত দেখা যায়, তাহলে গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ঘরোয়া উপায়ে কী মাসিক নিয়মিত রাখা যায়?
নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম, মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম, হালকা ব্যায়াম, সবজি-ফল ও ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার খাওয়া, এবং চিনিযুক্ত ও ফাস্ট ফুড পরিহার করা মাসিক নিয়মিত রাখতে সহায়ক হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ:
রিমি (২২) কলেজ ছাত্রী, তার হঠাৎ মাসিক ২০ দিন পরপর হচ্ছিল। ডাক্তার জানান, তার অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ভুল খাদ্যাভ্যাস এর কারণ। শুধু নিয়মিত ঘুম, খাদ্য পরিবর্তন ও ব্যায়াম শুরু করায় মাসিক আবার ৩০ দিনের নিয়মে ফিরে আসে।
২০ দিন পর পর মাসিক হওয়ার কারণ কি? এই প্রশ্নের উত্তর একাধিক। প্রতিটি মেয়ের শরীর আলাদা, তাই কারণও ভিন্ন হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি হলে এটিকে অবহেলা করা উচিত নয়। সময়মতো চিকিৎসা ও সচেতনতা আপনাকে রাখতে পারে সুস্থ ও নিরাপদ।